Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ঘটনাপুঞ্জ

ঘটনাপুঞ্জ

 

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য জনহিতকর কর্মসূচী আকারে সমবায় ব্যবস্থার প্রচলন করে। এর লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংশের হাত থেকে গ্রামের দরিদ্র কৃষকদেরকে রক্ষা এবং মহাজনী ঋণের সুদের বোঝা থেকে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া।সে সময় মহাজনদের নিকট থেকে ঋণ পেতে বন্ধক দেওয়ার একমাত্র সম্পদ ছিল কৃষকদের জমি। ফলে ঋণগ্রস্থ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা জমিতে প্রবেশের অধিকার হারিয়ে কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হতো। তারই ধারাবাহিকতায় এদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ষাট দশকের প্রথম ভাগে ড. আক্তার হামিদ খাঁনের নেতৃত্বে কুমিল্লায় তদানীন্তন Pakistan Academy for Rural Development (বর্তমান BARD) প্রতিষ্ঠা লাভ করে । ড. আক্তার হামিদ খাঁন তাঁর গবেষণায় পল্লী উন্নয়নের জন্য সমন্বিত মডেল প্রস্তাব করেন এবং তদানীন্তন BARD এর মাধ্যমে  Piloting শুরু করেন যা পল্লী উন্নয়নে “কুমিল্লা মডেল” নামে সুখ্যাত এবং গ্রাম ভিত্তিক সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমেই সেটা করা সম্ভব হয়েছে যা আজও সর্বস্বীকৃত। ১৯৭০ সন পর্যন্ত পল্লী উন্নয়নে কুমিল্লা মডেল কুমিল্লা জেলার ২০টি থানা এবং জেলার বাইরে ৩টি থানায়  Piloting করা হয়। ১৯৭১ সনে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের লক্ষ্যে কুমিল্লা মডেলের দ্বি-স্তর সমবায় কাঠামোকে জাতীয় পর্যায়ে পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী হিসাবে হাতে নেওয়া হয়। সেই থেকেই সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী অথাৎ আইআরডিপি’র যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭১ সনের যাত্রা শুরুর পর এর সফলতা লক্ষ্য করে পল্লী উন্নয়ন কর্মকান্ড’কে আরও গতিশীল করার জন্য ১৯৭৩ সনে আইআরডিপি’কে “বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন সংস্থা” নামে সরকারের একটি উন্নয়ন সংস্থায় রুপান্তর করা হয়। সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকার ১৯৮২ সালে আইআরডিপি’কে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বোর্ডে রুপান্তরিত করে যা বর্তমানে “বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড” (বিআরডিবি) নামে পরিচিত। সত্তর দশকে ‘অধিক খাদ্য ফলাও’ আন্দোলন থেকে শুরু করে  ‘পল্লী উন্নয়নে সোনালী সোপান’ এবং বর্তমানে ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন সমবায়ে উন্নয়ন’ শ্লোগানের মাধ্যমে বিআরডিবি’র অবদান আজ বহুল প্রশংসিত। সত্তর দশকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি দ্বিগুন হওয়ার পিছনে বিআরডিবি’র অবদান সর্বজন স্বীকৃত। সে সময় বিআরডিবি বিভিন্ন ধরনের হস্তচালিত নলকূপ,গভীর নলকূপ কৃষকদের মাঝে বিতরণের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা গতিশীল করতে সক্ষম হয়েছে। সত্তর থেকে নব্বই দশকের শেষ পর্যন্ত সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিআরডিবি বিভিন্ন প্রকল্প/কর্মসূচীও গ্রহণ করে। তৎপরবর্তীতে বিআরডিবি তার মূল কর্মকান্ড অথাৎ দ্বি-স্তর সমবায়ের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প সমূহ বাস্তবায়নের পাশাপাশি বেশ কিছু বিশেষায়িত প্রকল্প সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করেছে যেমন- মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচী (১৯৭৩ সন), যুব উন্নয়ন কর্মসূচী (১৯৭৮ সন), বিত্তহীন কর্মসূচী (১৯৮৪ সন) ইত্যাদি। বিআরডিবি কর্তৃক বাস্তবায়িত এসব বিশেষায়িত প্রকল্পের সফলাতার মূল্যায়নের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত সংস্থা সৃষ্টি হয়েছে যেমন- মহিলা উন্নয়ন অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন ইত্যাদি। ২০০৩-২০০৪ অর্থ বছরে বিআরডিবি সরকারের কাছ থেকে আবর্তক (কৃষি) ঋণ খাতে ৩২০ কোটি টাকা মঞ্জুরী পায় যা বিআরডিবি’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকান্ডে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ১৯৮৬-১৯৯৫ মেয়াদে বিআরডিবি,বার্ড,আরডিএ,বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,জাইকা ও জাপানের কিয়োটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে পল্লী উন্নয়নে “লিংক মডেল” নামে একটি টেকসই ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা হয়। উক্ত মডেলের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন চিহ্নিত করা হয়। এছাড়াও অংশীদারিত্বমূলক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিআরডিবি’র বিভিন্ন প্রকল্প/কর্মসূচী চলমান রয়েছে। এ সকল কাজের স্বীকৃত স্বরুপ “বাংলাদেশ গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ” (BIDS)  এর ২০১০ সালের এক সমীক্ষায় জিডিপিতে বিআরডিবি’র অবদান ১.৯৩% বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরেও বিআরডিবি’র এ কর্মধারা অব্যাহত রয়েছে। এমডিজি,ভিশন-২০২১ এবং ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাথে সংগতি রেখে বর্তমানে বিআরডিবি’র ৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাই বিআরডিবি বাংলাদেশ সরকারের একটি সফল প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত।